গোয়েন্দা মাসুদ রানা ঘটনাস্থলে পৌঁছালেন মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে। পুলিশের বড়কর্তা আগেই ছিলেন সেখানে।
— "এটা আত্মহত্যা হতে পারে, না?" এক পুলিশ কর্মকর্তা বলল।
রানা মৃদু হাসল।
— "আত্মহত্যা? দরজা বন্ধ ঠিক আছে, কিন্তু বাইরে রক্তের দাগ কেন?"
তার চোখ পড়ল বিছানার পাশে রাখা এক চিরকুটে। রক্ত দিয়ে লেখা মাত্র দুইটি শব্দ—
"ধোঁকা... বিশ্বাসঘাতক!"
রানা বুঝে গেল, এটা কোনো সাধারণ খুন নয়। কিন্তু খুনি তাহলে গেল কোথায়?
ঠিক তখনই বাতাসে একটা কিসের গন্ধ পেল রানা। একটু ঝুঁকে মৃতদেহের পাশে গিয়ে শুঁকতে লাগল।
অ্যামোনিয়া!
রানা চমকে উঠল। অ্যামোনিয়া সাধারণত ব্যবহার করা হয় পেইন্টিং বা কিছু নির্দিষ্ট রাসায়নিক কাজে। কিন্তু এই রুমে কোথাও রঙ করা হয়নি। তাহলে?
রানা দ্রুত জানালা খুলে দিল। হালকা বাতাস ঢুকতেই খাটের পাশে রাখা একটা বইয়ের পাতা উল্টে গেল। বইয়ের মাঝখানে একটা ছোট্ট কাগজ বেরিয়ে এলো—
"যদি আমাকে ধরতে পারো, তাহলে দেখা হবে কাল রাত ৩টায়… হাতিরঝিল ব্রিজে।"
রানার চোখ ঝলসে উঠল।
— "খেলা শুরু হলো!"
রাত ৩টা, হাতিরঝিল ব্রিজ। চারপাশ নীরব, শুধু পানির উপর বাতির প্রতিফলন খেলছে। মাসুদ রানা কালো জ্যাকেটের পকেটে হাত রেখে অপেক্ষা করছে, চোখ ঘুরিয়ে আশপাশ পর্যবেক্ষণ করছে।
হঠাৎ...
ব্রিজের ওপাশ থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে শুরু করল। কুয়াশার ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো একটা ছায়ামূর্তি। মুখ ঢাকা, কালো পোশাক। তার হাতে ছোট্ট একটা খাম।
রানা এক পা এগিয়ে বলল, "আমি জানি তুমিই খুনি। এত চালাকি করে লাশ ফেলে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ধরা পড়লে!"
অপরিচিত সেই মানুষটা হাসল, তার কণ্ঠ ঠান্ডা আর ধারালো—
"রানা, তুমি যা দেখছো তার সবটাই একটা ধোঁকা। সত্যিকারের শিকারি এখনো ছায়ার আড়ালে লুকিয়ে আছে!"
বলেই সে খামের ভেতর থেকে একটা ছবি বের করে ছুঁড়ে দিল রানার দিকে। রানা ছবি হাতে নিয়ে তাকাতেই চমকে উঠল—
ছবিতে নিজেরই মুখ!
রানার শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল। কেউ কি তবে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে?
ঠিক তখনই বাতাসে একটা হিসহিসে শব্দ হলো—
স্নাইপার!
রানা দ্রুত ঝাঁপিয়ে পড়ল, ঠিক সেই মুহূর্তে তার মাথার পাশ দিয়ে শাঁই করে গুলি চলে গেল! ব্রিজের ওপাশ থেকে একটা কালো বাইক গর্জন তুলে দ্রুত ছুটে গেল অন্ধকারের দিকে।
রানা বুঝতে পারল, এই খেলাটা আসলে আরও গভীর। খুনি শুধু পালাচ্ছে না, তাকে কোনোভাবে এই খুনের সাথে জড়াতে চাইছে।
এখন রানাকে খুঁজে বের করতে হবে—
বুলেট তার মাথা ছুঁয়ে বেরিয়ে গেছে, কিন্তু মাসুদ রানা ভয় পায়নি। সে দ্রুত উঠে দাঁড়াল। ব্রিজের অপর পাশে ছায়ার মতো মিলিয়ে গেল সেই রহস্যময় বাইক।
রানা মুহূর্তেই সিদ্ধান্ত নিল—ওদের ফাঁদে পা দিলে চলবে না, ওদেরই ফাঁদে ফেলতে হবে!
📍 ঢাকা সায়েন্স ল্যাব – সকাল ৮টা
মর্গের টেবিলে পড়ে আছে সেই রহস্যময় খুনের শিকার।
ডক্টর রফিক, ফরেনসিক এক্সপার্ট, গম্ভীর মুখে বললেন, "রানা, ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুত… আমরা লাশের পকেট থেকে একটা চিপ পেয়েছি। এতে এনক্রিপ্টেড কিছু তথ্য আছে।"
রানা দ্রুত চিপটা হাতে নিল। কম্পিউটারে প্লাগ করতেই স্ক্রিনে একটা কোড ভেসে উঠল—
🔒 BLACK CODE - 0415
রানার চোখ সংকীর্ণ হয়ে গেল।
💡 BLACK CODE – একটা গুপ্ত সংগঠন, যারা শুধু হাই-প্রোফাইল ব্যক্তিদের টার্গেট করে। গুজব ছিল যে এই সংগঠন শেষ হয়ে গেছে… কিন্তু এখন?
রানা বুঝতে পারল, এটা কোনো সাধারণ খুন নয়। খুনি শুধু একজন নয়—একটা শক্তিশালী চক্র কাজ করছে!
📍 সন্ধ্যা ৭টা – ঢাকা ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরি
রানা গোপনে অনুসন্ধান চালিয়ে জানতে পারল, খুন হওয়া ব্যক্তির নাম রাশেদ করিম। তিনি একজন সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ ছিলেন, এবং তার হাতেই ছিল BLACK CODE-এর গোপন ফাইল!
কিন্তু প্রশ্ন হলো—
✅ কে এই BLACK CODE?
✅ কেন রাশেদ করিমকে হত্যা করা হলো?
✅ আর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন— পরবর্তী শিকার কে?
ঠিক তখনই রানার ফোন ভাইব্রেট করল। অজানা নাম্বার।
রানা রিসিভ করতেই শোনা গেল শীতল একটা কণ্ঠ—
রানার কানে বাজছিল শেষ কথাগুলো—
"পরবর্তী টার্গেট তুমি!"
তার মানে, শুধু রহস্য উন্মোচন করাই নয়, এবার তাকে নিজের জীবনও বাঁচাতে হবে!
📍 রাত ১১টা – রানা সিক্রেট সেফহাউস
একটা ল্যাপটপের স্ক্রিনে দ্রুত টাইপ করছে রানা। সেই এনক্রিপ্টেড BLACK CODE-এর চিপ ভাঙার চেষ্টা করছে। কিন্তু যতই চেষ্টা করুক, কোড খুলতে পারছে না।
ঠিক তখনই দরজার নিচ দিয়ে একটা ছোট্ট কাগজ গড়িয়ে এলো।
রানা দ্রুত উঠে গিয়ে দরজা খুলল—কিন্তু বাইরে কেউ নেই!
সে ধীরেধীরে কাগজটা খুলল।
ভেতরে লেখা মাত্র তিনটি শব্দ—
🔻 "RUN OR DIE!" 🔻
রানার চোয়াল শক্ত হলো। ঠিক তখনই তার ছাদে একটা দপদপে লাল আলো ফুটে উঠল।
বোমা!
রানা জানালার কাঁচ ভেঙে বাইরে লাফ দিল! ঠিক পাঁচ সেকেন্ড পর তার পুরো সেফহাউস বিস্ফোরণে উড়ে গেল! আগুনের শিখা আকাশ ছুঁলো!
ধুলোর মাঝে পড়ে থাকা রানা ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল।
তার চোখে এবার ভয় নেই, শুধু প্রতিশোধের আগুন!
সে ফিসফিস করে বলল—
মাসুদ রানা এখন শিকার নয়, শিকারি! বিস্ফোরণের পর সে বুঝে গেছে, BLACK CODE তার পেছনে লেগেছে। কিন্তু কেন?
রানা জানে, উত্তর পেতে হলে ওদের ফাঁদে ওদেরই ফেলতে হবে।
📍 সায়েন্স ল্যাব – গুপ্ত ডাটা সেন্টার
রানা ফ্ল্যাশ ড্রাইভ থেকে BLACK CODE-এর এনক্রিপ্টেড তথ্য আনলক করল। স্ক্রিনে ভেসে উঠল এক গোপন ডকুমেন্ট—
🚨 "TARGET LIST – HIGH PRIORITY" 🚨
📌 ১. রাশেদ করিম – (ELIMINATED)
📌 ২. মাসুদ রানা – (ACTIVE TARGET!)
📌 ৩. …" (নাম মুছে ফেলা)
রানা বুঝতে পারল, সে শুধু পরবর্তী টার্গেট নয়, বরং সে এই হত্যাকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু!
ঠিক তখনই তার পেছন থেকে কেউ গ্লকের ঠান্ডা নলটা ঠেকিয়ে দিল কপালে।
— "গেম ওভার, রানা!"**
রানা ধীরে ধীরে হাত তুলল। কিন্তু তার ঠোঁটে সেই পরিচিত বাঁকা হাসি...
"তুমি ভাবছো আমি একা এসেছি?"
থপ থপ থপ!
এক মুহূর্তের মধ্যে জানালার বাইরে থেকে একটা স্নাইপার বুলেট এসে খুনির হাত উড়িয়ে দিল!
ধপ!
রানা ঘুরে তাকাল—খুনি পড়ে কাতরাচ্ছে, মুখ থেকে ঝরছে রক্ত।
সে কাঁপা কণ্ঠে বলল, "তুমি... তুমি জানলে কীভাবে?"
রানা সামান্য ঝুঁকে এসে কানের কাছে বলল—
"আমি শুধু শিকারি নই, আমি শিকারের আগে ফাঁদ পাতি!"
শেষ গুলিটা খুনির কপালে লাগতেই সব শেষ।
📍 সকাল ৬টা – ঢাকা, অজানা এক কফিশপ
রানা জানালার পাশে বসে কফিতে চুমুক দিচ্ছিল। পেছন থেকে এক রহস্যময় কণ্ঠ বলল—
"BLACK CODE শেষ হয়েছে... কিন্তু আসল শত্রু এখনও অদৃশ্য!"
রানা হাসল।
"আসুক... এবার আমি তৈরি!"
(শেষ, নাকি... শুরু?)