মোলোনা সাহেবের প্রেম কাহিনী

2000mrstudio
0

শ্যামনগরের একটি গ্রামে সাবির মোলনা নামে এক ভদ্র, ধার্মিক যুবক থাকত। সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত, ইসলামি জীবনযাপন করত এবং খুবই সুশীল চরিত্রের জন্য সবার কাছে সম্মানিত ছিল। তার জীবনে কোনো মেয়ে কখনোই বিশেষ স্থান পায়নি। তার সমস্ত সময় আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য ইবাদতে কাটত। তবে তার সবার মতো সাধারণ জীবন একদিন বদলে গেল, যখন সে প্রথমবারের মতো কাউকে ভালোবাসল।

প্রথম দেখায় প্রেম

একদিন জুমার নামাজ শেষে সাবির গ্রামে একটি হাটে কিছু জিনিস কিনতে গিয়েছিল। সেখানেই সে প্রথম দেখল রুমানাকে—এক বোরখা পরা মেয়ে, যার মুখটা ছিল খুব মায়াময়। তার সজ্জনতা, চোখের গভীরতা, আর ব্যবহারে সাবির মুগ্ধ হয়ে গেল। মোলনা সাহেব হয়েও তার হৃদয় থেমে থাকল না। সে বুঝল, মেয়েটিকে সে পছন্দ করে ফেলেছে।

কিছুদিনের মধ্যেই সাবির জানতে পারল মেয়েটির নাম রুমানা। তবে রুমানার পরিবার ছিল গ্রামের প্রভাবশালী, অথচ খুব রক্ষণশীল। তারা মেয়ের যেকোনো সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করত।

অপ্রত্যাশিত বিরোধ

সাবির তার পছন্দের কথা সরাসরি রুমানাকে বলতে সাহস পেল না। তবে বন্ধুরা—মাসুদ রানা, কাবারুল, নাসিম, জব্বার আর কবির—তার এই পরিবর্তন লক্ষ করল। মাসুদ রানা বলল, “মোলনা সাহেব, আপনি তো এত ভদ্র! হঠাৎ প্রেমে পড়লেন?”
সাবির একদম লজ্জা পেয়ে বলল, “আমার হৃদয়ের উপর আমার নিয়ন্ত্রণ নেই। আমি জানি, এটা হালাল পথে হওয়া উচিত। আমি তাকে বিয়ে করতে চাই।”

কিন্তু সমস্যা হলো, রুমানার পরিবার সাবিরের এই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করল। তারা রুমানার ওপর কঠোর নজরদারি শুরু করল এবং তাকে বাড়ির বাইরে যেতে দিতে চাইত না। এমনকি রুমানার পরিবার সাবিরের এই প্রস্তাবকে অপমান হিসেবে নিল।

বন্ধুদের সাহায্য

সাবির ভেঙে পড়ল। তবে তার বন্ধুরা তার পাশে দাঁড়াল। তারা একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিল, রুমানাকে অত্যাচার থেকে মুক্ত করতে হবে। রাতের বেলায়, বন্ধুদের সাহায্যে রুমানাকে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আসা হলো। তারা সাবির ও রুমানার নিকাহের ব্যবস্থা করল, যাতে তারা ইসলামের বিধান মেনে একসঙ্গে জীবন শুরু করতে পারে।

পুলিশের খোঁজ

কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ হলো না। রুমানার বাবা-মা পুলিশে অভিযোগ করল। গ্রামে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ল। পুলিশ সাবির ও তার বন্ধুদের খুঁজতে শুরু করল।

তারা একসঙ্গে গ্রাম ছেড়ে অচেনা এক জায়গায় পালিয়ে গেল। সেখানে, একটি নির্জন জঙ্গলের পাশে তারা একটি ছোট ঘর বানাল। নতুন জায়গায় তারা সবজি চাষ শুরু করল, ছোট ছোট কাজ করল, এবং নিজেদের জীবন চালাতে শুরু করল। রুমানা ও সাবির একসঙ্গে খুব ভালোভাবে জীবন কাটাতে লাগল।

একটি নতুন অধ্যায়

কয়েক মাস পর, রুমানা গর্ভবতী হলো। এই সুখের খবর সবাইকে উচ্ছ্বসিত করে তুলল। তারা জানত, তাদের জীবনের কঠিন পথের শেষে একটি আশীর্বাদ আসছে।

পরিবারের পরিবর্তন

এদিকে, রুমানার মা-বাবা তাদের মেয়ের খোঁজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেল। একদিন, তারা হঠাৎ করেই সেই নতুন জায়গায় গিয়ে সাবির ও রুমানাকে খুঁজে পেল। তারা তখন জানতে পারল, তাদের মেয়ে সুখেই আছে এবং শিগগিরই মা হতে চলেছে।

রুমানার সন্তান জন্ম নিলে, তার মা-বাবার মন বদলে গেল। তারা বুঝতে পারল, ভালোবাসা আর সম্মানের সম্পর্ক কখনো আটকানো উচিত নয়।

শেষ কথা

রুমানার পরিবার অবশেষে সাবির ও রুমানার সম্পর্ক মেনে নিল। তারা ফিরে গিয়ে গ্রামে নতুনভাবে জীবন শুরু করল। ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, আর আত্মবিশ্বাসের শক্তিতে তারা সব বাধা অতিক্রম করল। তাদের এই গল্প গ্রামের মানুষদের জন্য একটি উদাহরণ হয়ে রইল—ভালোবাসা আর বিশ্বাস কখনো থেমে থাকে না।

                  ~ মাসুদ রানা 


Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Accept !