শ্যামনগর গ্রাম। বাঁশের সাঁকো পেরোলেই একটি ছোট্ট কুঁড়েঘর। ওই ঘরেই থাকে মায়া। কালো গায়ের রং, কিন্তু মুখে এমন এক শান্ত মাধুর্য, যেন শত দুঃখেও মন ভরে ওঠে। মায়া গ্রামের সবার প্রিয়। তার মিষ্টি হাসি আর কোমল ব্যবহারে কেউ তাকে অবহেলা করতে পারে না।
মায়ার দিন কাটে মাঠে কাজ করে, আর সন্ধ্যায় মায়ের সঙ্গে ঘরের কাজ সেরে। কিন্তু মনের গভীরে লুকিয়ে থাকে এক গোপন আকাঙ্ক্ষা—ভালোবাসার আশ্রয়। গ্রামের ছেলে-মেয়েরা তার রূপ নিয়ে ঠাট্টা করলেও মায়ার তাতে কিছু আসে যায় না। সে জানে, সৌন্দর্য নয়, মনের ভালোবাসাই আসল।
একদিন গ্রামের মেলা বসলো। মায়া, তার সঙ্গীদের সঙ্গে মেলায় গেল। মেলায় অনেক দোকান, হাসি-আনন্দে ভরা পরিবেশ। হঠাৎ করেই তার চোখ পড়ল একজন অপরিচিত ছেলের দিকে। ছেলেটি শহর থেকে এসেছে। নাম কাবারুল। লম্বা, ফর্সা, আর চোখে-মুখে আত্মবিশ্বাস।
কাবারুলের দৃষ্টি পড়েছিল মায়ার দিকে। এত মিষ্টি, মায়াভরা মুখ, যা সে আগে কখনও দেখেনি। গ্রামের মেয়েদের মধ্যে মায়ার সারল্য তাকে গভীরভাবে টেনেছিল। মেলার শেষে, কাবারুল মায়ার দিকে এগিয়ে এল।
“তোমার নাম মায়া?” কাবারুল জিজ্ঞেস করল।
মায়া একটু লজ্জা পেল, তবুও মাথা নিচু করে বলল, “হ্যাঁ।”
“তোমার মুখে এমন কিছু আছে, যা মন ছুঁয়ে যায়,” কাবারুল বলল।
এরপর থেকে কাবারুল প্রায়ই শ্যামনগরে আসত। মায়ার সঙ্গে কথা বলত। দুজনের মধ্যে গড়ে উঠল এক গভীর বন্ধন। কাবারুল বুঝতে পারল, মায়ার গায়ের রং নয়, তার মনের মাধুর্যই তাকে এত আকর্ষণ করেছে।
গ্রামে গুজব রটতে লাগল। মায়ার সাহস কমে গেল। একদিন কাবারুলকে সে বলল, “তুমি শহরের ছেলে, আর আমি একজন সাধারণ গ্রাম্য মেয়ে। আমাদের মধ্যে এই সম্পর্ক কখনোই সম্ভব নয়।”
কাবারুল মায়ার হাত ধরে বলল, “তুমি জানো, ভালোবাসা গায়ের রঙ দেখে হয় না। আমি তোমার মনের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছি। সমাজ যাই বলুক, আমি তোমাকে ছেড়ে যাব না।”
কিছুদিন পর কাবারুল তার পরিবার নিয়ে মায়ার বাড়িতে এল। তাদের জানাল, সে মায়াকে বিয়ে করতে চায়। প্রথমে বাধা এলেও, মায়ার মায়াভরা মুখ আর কাবারুলের সত্যিকারের ভালোবাসা দেখে সবাই রাজি হয়ে গেল।
মায়া আর কাবারুলের বিয়ে হলো। মায়ার সেই মায়াভরা মুখ ভালোবাসার প্রতীক হয়ে থাকল সবার মনে। শ্যামনগরের মানুষ তখন বুঝেছিল, ভালোবাসা কখনোই বাহ্যিক সৌন্দর্যের উপর নির্ভর করে না।